স্কুলছাত্রী আনজুম হ/ত্যা; কোথায় পৌঁছেছে আমাদের নৈতিকতা?

প্রেমের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান ও ধ/র্ষ/ণে ব্যর্থ হয়ে শ্বা/স/রো/ধে হ*ত্যা করা হয় তাকে। নিখোঁজের পর ২দিন খোঁজা-খুঁজির পর বাড়ির নিকটে ছড়ার পাশে দুর্গন্ধ পেয়ে তাঁর ভাই ও মামা অর্ধগলিত ম/র/দে/হ/টি দেখতে পান। কী নিদারুন চিত্র! ভাবতে গেলে খেই হারিয়ে ফেলি, মানুষ কী ভাবে এতোটা হিং/স্র হতে পারে তা বুঝে ধরে না। কোন সমাজে বসবাস করছি আমরা? কোথায় পৌঁছেছে আমাদের নৈতিকতা?
বলছিলাম মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার নিখোঁজ স্কুলছাত্রী নাফিছা জান্নাত আনজুম (১৫) এর কথা। ১২ জুন সকাল ৭টার দিকে পাশের সিংগুর গ্রামে প্রাইভেট পড়ায় যেতে বের হয় নাফিছা। আর ফিরে আসেনি। তাঁর নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে কুলাউড়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ঘটনার দুই দিন পর, ১৪ জুন বিকাল ৫টা ৪০ মিনিটে বাড়ির নিকটে একটি ছড়ার পাশে দুর্গন্ধ পেয়ে তাঁর ভাই ও মামা অর্ধগলিত ম/র/দে/হ/টি খুঁজে পান। নাফিছা’র পরিবার, আত্মীস্বজন এবং এলাকাবাসীর মধ্যে বইতে শুরু করে শোকের মাতম। ঘটনাটি পুলিশকে জানালে তারা এসে ম/র/দে/হ উদ্ধার করে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে পাঠায় এবং পরদিন নাজিছা’র মা বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা রুজু করে।
চাঞ্চল্যকর এ হ/ত্যা/কা/ণ্ডে/র রহস্য দ্রুত সময়ে উদ্ঘাটনে পুলিশের একাধিক তদন্ত টিম মাঠে নামে এবং এলাকায় স্থানীয় লোকের তথ্যমতে খোঁজ নিয়ে সন্দেহভাজন হিসেবে প্রতিবেশী ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের দাউদপুরের জাহির মিয়ার ছেলে জুনেল মিয়া (৩৯) কে গ্রেপ্তার করে। জুনেল পেশায় কাঠমিস্ত্রি। তার এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান রয়েছে।
জুনেল ও নাফিছা’র বাড়ি পাশাপাশি। এর আগেও সে নারী ও স্কুলগামী মেয়েদের শ্লী/ল/তা/হা/নি/র ৬-৭টি ঘটনা ঘটিয়েছে। এলাকার স্কুল-কলেজপড়ুয়া মেয়েদের সে প্রায়শই উ/ত্ত্য/ক্ত করতো। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়ভাবে একাধিক সালিশও হয়েছে। তার মোবাইল চেক করে প*র্নো সাইটে ব্রাউজিংয়ের তথ্য দেখে পুলিশের সন্দেহ আরও বাড়ে। পরবর্তীতে পুলিশ তাকে আটকের দিন দুপুর থেকে রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে হ/ত্যা/কা/ণ্ডে/র কথা স্বীকার করে।
সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে মৌলভীবাজার পুলিশ সুপার কার্যালয়ের কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার এম কে এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে নানা মিথ্যার আশ্রয় নেয় জুনেল। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে সে হ/ত্যা/র কথা স্বীকার করে জানায়, নাফিছা ১২ই জুন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পাশের গ্রামে প্রাইভেট পড়া শেষে তার বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে ফেরার পথে পিছু নেয় সে। একপর্যায়ে জড়িয়ে ধরে জুনেল রাস্তা থেকে নির্জন জঙ্গলের ভেতর নাফিসাকে নিয়ে ধ/র্ষ/ণে/র চেষ্টা করে। তখন নাফিছা চিৎকার করলে তাকে গলা চে*পে ধরে হ*ত্যা করে ছড়ার পাড়ের ঝোপে ফেলে দেয়। এবং গায়ের বোরকা ফেলে দেয় পাশের একটি পারিবারিক কবরস্থানের সীমানায়, আর স্কুলব্যাগ ও জুতা ফেলে ঝোপে ভেতর। গ্রেপ্তারের পর ঘা/ত/ক জুনেলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই রাতেই পুলিশ স্থানীয়দের উপস্থিতিতে এসব উদ্ধার করে।
ঘাতক জুনেল পুলিশকে জানায়, তার বাড়ির সামনের একটি রাস্তা দিয়ে স্কুল ও প্রাইভেটে আসা-যাওয়া করতো নাফিছা জান্নাত আনজুম। সেই সুবাদে জুনেল আনজুমের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ধ/র্ষ/ণে/র পরিকল্পনা করে জুনেল। প্রেম ও ধ/র্ষ/ণে ব্যর্থ হয়ে ক্ষুব্ধ জুনেল আনজুমকে শ্বা/স/রো/ধ করে হ*ত্যা করে।
স্কুল ছাত্রী নাজিফা হত্যার এই ঘটনা শুধু একটি হত্যাকাণ্ড নয়, এটি সমাজের বিবেককে নাড়া দেওয়া মত একটি অ/শ/নি সংকেত। আমাদের সামাজিক ও নৈতিক পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনা করা হলে বলতে দ্বিধা নেই যে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র চরম অবক্ষয়ের শিকার। আমাদের যুবসমাজ ভিনদেশি অ/শ্লী/ল সংস্কৃতির কোপানলে পড়ে তাদের চরিত্র হারাতে বসেছে। তাদের মেধা-মগজ সর্বদা সে দিকেই পড়ে থাকে, এজন্য তাদের এ অধঃপতন। তাই যেসব কারণে যুবসমাজ অধঃপতিত হয়েছে তা যত তাড়াতাড়ি প্রতিহত করা যাবে, তত তাড়াতাড়ি যুবসমাজের উন্নয়ন সাধন করা সম্ভব হবে। অন্যথায় সমাজ, দেশ ও জাতি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
লেখক: কবি, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী






















